মধু পরীক্ষার কিছু ভূল পদ্ধতি:
খাটি মধুতে পিপড়ে ধরে নাঃ
এটি ভুল তথ্য । নিজেরা বহুবার পরিক্ষা করেছি। চাইলে সামনে চাক কেটে নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সত্যি মিথ্যা নিজেই বুঝে যাবেন।
মধুতে আগুন ধরেঃ
জি ধরে সব মধু তে না । যে মধুতে মইশ্চার কম থাকে সে মধু কোন কাগজে অথবা দেশলাই এর কাঠির মাথায় লাগালে আগুন জ্বলে। কিন্তু পাতলা মধুতে এই পরীক্ষা করলে উল্টো ফল পাবেন । মধু পিওর হলেও আগুন না জ্বলায় ভ্যাজাল বলে আখ্যা নিশ্চিত ।
মধু গ্লাসের পানিতে দিলে সরাসরি বসে যায়ঃ
জি যায় তবে ঘন মধু আর পাতলা মধুতে বিস্তর ফারাক ফলাফলের।ঘন করে চিনির অথবা মিশ্রির সিরা বানিয়ে গ্লাসে ঢেলে দিলেও দেখা যার অনেকসময় নিচে বসে যায়।
খাঁটি মধু জমে নাঃ
এটা সব থেকে বড় ভূল ধারনা । যে মধুতে গ্লকোজ এর মাত্রা যত বেশি সেই মধু জমাট বাধার সম্ভাবনা তত বেশি । যেমন সরিষা ফুলের মধু ১৫-২০ দিনের মধ্যেই জমে যায়।পাতলা মধুতে সাধারণত তলানি পরে না । তবে যে কোন মধু অনেক দিন রেখে দিলে তলানি জমা স্বভাবিক।
আরো কিছু ভ্রান্ত ধারনা আছে মধু নিয়ে সেগুলো হলঃ
মধু চুনের সাথে মেশে না,
বুড়া আঙুলের মাথায় দিলে যদি একটা একটা বিন্দুর মতো স্থির থাকে,
ফ্রিজে রেখে দিলে জমে না,
মধু কুকুরে খায় না,
মধুর রং শুধু গাড় লাল অথবা খয়েরি হয়।
উপরোক্ত পরীক্ষা গুলোর কোন টাই বাস্তব সম্মত নয়।এক এক মধুতে এক এক ফলাফল দেয়।এসব দিয়ে মধু চেনা যায় না।খাঁটি মধুও ভ্যাজাল বলে মনে হয় । তাহলে ঘরে বসে খাঁটি মধু চিনব কীভাবে? কোনো উপায় নেই। শুধু আমাদের কাছেই না, পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের কাছেও নেই। অনলাইনে যেসব দেখাচ্ছে সেগুলো ভিউ বাড়ানো ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বিশুদ্ধ মধু চেনার কিছু সঠিক উপায়:
১ম পদ্ধতি: বাংলাদেশে প্রচলিত মধুগুলোর বৈশিষ্ঠ্য গুলো জেনে মিলিয়ে নিন এবং মুখে দিয়ে টেষ্ট করুন। সহজ সরল ভাষায় নিজের জিহ্বাবকে ল্যাব বানিয়ে নিন, যাতে করে জিহ্বায় দিলেই কিছুটা বুঝতে পারেন মধুটা আসল নাকি আর্টিফিশিয়াল। জেনে নিন নতুন আর পুরাতন মধুর স্বাদ।
২য় পদ্ধতি: মৌ মাছি যখন নেক্টার বা ফুলের রস সংগ্রহ করে তখন সাথে পুলেন বা ফুলের রেনুও সংগ্রহ করে চাকে জমা রাখে । মধু সংগ্রহের সময় সেই পুলেন ( ফুলের রেনু) মধুর সাথে মিশে যায় । অবাক করার বিষয় হলো পৃথিবীতে যত ফুল আছে প্রত্যেক ফুলের পুলেন(ফুলের রেনু) একটির সাথে আরেকটির কোন মিল নেই, তাই সহজে এদের আইডেন্টিফাই করা সম্ভব। মধু অরজিনাল হলে এতে পুলেন থাকবেই । আপনি চাইলে কাছের কোন ল্যাব বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পুলেন চেক করতে পারেন।
৩য় পদ্ধতি: খুব বেশি প্রয়োজন হলে আপনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদে গিয়ে মধুর ল্যাব টেষ্ট করে নিতে পারেন।
৪র্থ ও র্সবাধুনিক পদ্ধতি: মধুর বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে সর্বশেষ নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তাহলো Nuclear Magnetic Resonance (NMR)। এই পদ্ধতিতে মধু বা মধু নামক দ্রবণটির কনাগুলোর পারমাণবিক নিউক্লিয়ারের আশপাশের চৌম্বকীয় তরঙ্গকে পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মূলত এই NMR মেশিনে Honey-Profiling করা হয়। মেশিনের ডাটাবেজে আগে থেকেই সংরক্ষিত হাজার রকমের মধু, চিনি, গ্লুকোজ সিরাপ, রাইস সিরাপ, কর্ন সিরাপ সহ অন্যান্য প্রোফাইল সংরক্ষণ থাকে। এই মেশিন অল্প সময়ের মধ্যে নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ডাটাবেজের চেক করে আউটপুট দেয়। NMR পরীক্ষাটি Bruker Ascend 400 মেশিনের সাহায্যে করা হয়।
শেষ কথা NMR পরীক্ষাই হলো বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মধুর বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের এখন পর্যন্ত সর্বশেষ পরীক্ষা।আমরা মৌ মাছি নিয়ে কাজ করি ,আমাদের রয়েছে নিজেস্ব মৌ খামার, তাই শত ভাগ নিশ্চয়তা দিয়েই মধু সরবরাহ করছি।